Post

মাথায় হাজারো প্যারা নিয়ে কিভাবে Mental Health ঠিক রাখবেন?

কঠিন প্রশ্ন। সহজ উত্তর, কোনো প্যারাই নিবেন না। হাঁ হাঁ, ব্যাপারটা এতটাও সহজ নয়। তাহলে কি এমন করবেন যে সাপও মরবে, আবার লাঠিও ভাঙবে না? উত্তর সেই আগেরটাই, প্যারা নিবেন না। একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাখা করছি।

গতকাল আমি একটা নতুন ফিচার নিয়ে কাজ করছিলাম। ভাবছিলাম এই কাজটা সহজ হবে। কিন্তু অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও দেখলাম আমি একটা ছোট্ট সমস্যায় আটকে আছি। খুবই বিরক্ত লাগছিলো। মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটা সলভ না করে সামনেও আগাতে পারছি না। পরে বুঝলাম যে, না, আপাতত এখান থেকে বের হওয়া দরকার।

প্রথমে ওয়াশরুমে গেলাম। হাতে মুখে ঠান্ডা পানি দিলাম। ওযু করলাম। তারপর রুমের মধ্যে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। এটা আমি প্রায়ই করি, যখন খুব জটিল কিছু নিয়ে চিন্তা করি। এটা আমাকে ভালোভাবে ভাবতে সাহায্য করে।

অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পরও মাথায় কিছু আসছিলো না। বুঝলাম বড় বিরতি দরকার। ভাবলাম বাইরে থেকে হেঁটে আসি। বাইরে ফ্রেশ ওয়েদার, প্রকৃতির নির্মল বাতাস, আর পরিবেশের পরিবর্তন আমার মাথার জটকেও পরিষ্কার করে দিল।

খুব বেশি সিরিয়াস কিছু নিয়ে প্যারায় থাকলে অনেক সময় আমি নফল নামাজ পড়তে বসি। নামাজ খুব দ্রুত ফোকাস পরিবর্তন করে আর মনের মধ্যে একটা শান্তির অনুভূতি সৃস্টি করে। জাগতিক সবকিছু তখন ছোট মনে হয়।

যাই হোক, প্রায় এক ঘন্টা বাইরে ঘুরাঘুরির পর ডেস্কে ফিরে এলাম। পুরো কোড খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুরু থেকে দেখতে লাগলাম। আশ্চর্যজনকভাবে, অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের একটা সহজ আইডিয়া পেয়ে গেলাম। যা আগে কঠিন লাগছিল, এখন মনে হচ্ছে কত সহজ!

এই অভিজ্ঞতা আমার নতুন নয়। তবে এমন অভিজ্ঞতা আমাকে সবসময় একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়: যখন কোনো সমস্যায় আটকে যাও, তখন একই কাজ একই ভাবে করে যেয়ো না। ভিন্ন ভাবে করো। না হয় ভিন্ন কিছু করো। সম্ভব হলে বিরতি নাও। একটু হাঁটো, বা শুধু কিছুক্ষণের জন্য দূরে যাও। ফিরে এলে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করো।

আমি যদিও খুব কম বিশ্রাম নিই, কিন্তু বিশ্রাম বা সাময়িক বিরতি শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা সমস্যার সমাধানের অন্যতম চাবিকাঠি বলে আমার মনে হয়।

এখন দেখি এর পেছনে কোনো বিজ্ঞান 🔬 আছে কি না।

মানব মস্তিষ্ক একটি অসাধারণ কিন্তু সীমিত সম্পদ। যখন আপনি অনেকক্ষণ ধরে কোনো কঠিন সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন, তখন আপনার প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) ক্লান্ত হয়ে যায়। এই অংশটি জটিল চিন্তা, সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দায়ী। এটি যেমন কার্যকরী, তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহারে এই অংশটি দ্রুত কার্যক্ষমতা হারায়।

বিরতি নেওয়াটা প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে বিশ্রামের সুযোগ করে দেয় এবং পুনরুজ্জীবিত করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্ষিপ্ত বিরতি নেওয়া মানসিক ক্লান্তি কমাতে এবং একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।

এবার আসি এমন অবস্থায় হাঁটাহাঁটির উপকারিতা 🏃‍♂️ কি?

হাঁটাহাঁটি করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন পৌঁছায়। এটা চিন্তার প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটাহাঁটি সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে সাহায্য করে।

পরিবেশ পরিবর্তনের প্রভাব 🌳 কি?

এক জায়গায় অনেকক্ষণ থাকার পর, পরিবেশ পরিবর্তন করলে মন সতেজ হয়। মস্তিষ্ক নতুন পরিবেশ থেকে নতুন তথ্য সংগ্রহ করে, যা নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরি করতে সাহায্য করে। এই কারণেই বাইরে গিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলে বা অন্য কোনো কাজ করলে সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যায়।

প্রার্থনা কিভাবে কাজ করে?

প্রার্থনা করা (বা নামাজ পড়া) মানসিক চাপ কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে। মনকে প্রশান্তি দেয়। মানসিক চাপ কমলে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে এবং সমস্যার সমাধান দ্রুত হয়।

তাই, পরের বার যখন কোনো সমস্যায় আটকে যাবেন, মনে রাখবেন যে, সাময়িক বিরতি নেওয়া আপনার সময়ের অপচয় নয়, বরং মস্তিষ্ককে সাময়িক বিরতি দেওয়া আসলে আপনাকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলতে পারে। এটা আপনার মনের জন্য রিসেট বাটনের মতো কাজ করে। 🔄

This post is licensed under CC BY 4.0 by the author.